সাতক্ষীরায় থানা হেফাজত থেকে নিখোঁজ মোখলেছুর রহমান ওরফে জনি! 

সাতক্ষীরা শহরের পারকুকরালির মোখলেছুর রহমান সদর থানা হেফাজত থেকে নিখোঁজ হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর পরিবার। পাঁচ বছরেও তাঁর সন্ধান মেলেনি। এ ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে গতকাল মঙ্গলবার মোখলেছুরের বাবা শেখ আব্দুর রাশেদ বাদী হয়ে ছেলেকে অপহরণ করে খুন করার পর লাশ গুম করার অভিযোগে সাতক্ষীরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন।

মামলায় সদর থানার তৎকালীন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (O C) এমদাদ শেখ, তাঁর পরের ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লা ও উপপরিদর্শক ( S I) হিমেলকে আসামি করা হয়েছে। বিচারক মো. হ‌ুমায়ূন কবীর মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে আদেশের জন্য আজ বুধবার ধার্য করেছিলেন। 

 সে অনুযায়ী বিচারক আজ হাইকোর্টের রিটের অনুলিপি এবং জুডিশিয়াল তদন্ত প্রতিবেদন ও পিবিআইকে তদন্ত প্রতিদেনের অনুলিপি আগামী ১০ দিনের মধ্যে জমা দেওয়ার আদেশ দিয়ে ২৯ আগস্ট শুনানির দিন ধার্য্য করেছেন

মামলার বিবরণ ও স্বজনদের সূত্রে জানা যায় যে  2016/8/8 রাত 9:27 এর দিকে অসুস্থ বাবার জন্য সাতক্ষীরা শহরে ওষুধ কিনতে যান মোখলেছুর রহমান ওরফে জনি। 

 এ সময় সাতক্ষীরা শহরের লাবনী সিনাম হলের সামনের একটি দোকান থেকে সদর থানার   S I হিমেল নেম তাঁকে থানায় ধরে নিয়ে যান। 5 6ও 7 August মোখলেছুরের সাবেক স্ত্রী জেসমিন নাহার তাঁর শ্বশুর ও স্বজনদের নিয়ে থানায় তাঁকে খাবার দেন। 

এ সময় তাঁর সঙ্গে কথাও বলেছেন তাঁরা। থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ ও এসআই হিমেল সেই সময় তাঁদের বলেন, মোখলেছুরের জঙ্গি সম্পৃক্ততা রয়েছে। পরে 8 August থানায় গেলে মোখলেছুরকে পাওয়া যায়নি। এ সময় পুলিশকে জিজ্ঞাসা করলেও মোখলেছুর কোথায় তা তারা জানাতে পারেনি।


থানা হেফাজত থেকে মোখলেছুরের নিখোঁজ হয়েছে বিষয়টি ওই বছরের ২৪ আগস্ট সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারকে জানানো হয়। পরে 26 December থানায় সাধারণ ডায়েরি (GD) করতে গেলে  থানার তৎকালিন ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লা তা গ্রহণ করেননি।

মোখলেছুরের স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, থানা হেফাজত থেখে মোখলেছুরের নিখোঁজ হওোর বিষয়টি ওই বছরের ২৪ আগস্ট সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারকে জানানো হয়। পরে ২৬ ডিসেম্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি (GD) করতে গেলে থানার তৎকালীন OC from Hossein molla তা গ্রহণ করেননি। 

 তার পরিবার কোনো উপায় না পেয়ে এ ঘটনায় ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন মোখলেছুরের সাবেক স্ত্রী জেসমিন নাহার। বিষয়টি জানতে পেরে ওই বছরের ২১ জআনুয়ারিি আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তদন্ত দলের সদস্য অনির্বাণ সাহা, মানবাধিকারকর্মী রঘুনাথ খাঁসহ কয়েকজনমোখলেছুরের বাড়িতে আসেন এবং পরে থানায় যান। এ নিয়ে পরদিন প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। 

এ বিষয়ে ২০১৭ সালের ২ মার্চ হাইকোর্টে রিট করেন মোখলেছুরের সাবেক স্ত্রী জেসমিন নাহার। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ আদালতে উপস্থাপন করা পুলিশ সুপারের ব্যাখ্যায় বলা হয়, মোখলেছুর রহমান নিষিদ্ধ সংগঠন ‘আল্লাহর দল’-এর সঙ্গে যুক্ত এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

 ওই দিন শুনানি শেষে হাইকোর্ট পুলিশকে ১২ এপ্রিলের মধ্যে মোখলেছুরকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ৯ মে এ–সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য  police legal wing Assistan Comitioner of police( ACP) A S M javed Hassan কে নির্দেশ দেওয়া হয়।

 সে অনুযায়ী লিগ্যাল উইংয়ের অপর ASP ekramul habibসাতক্ষীরার পুলিশ সুপারসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য ও পাঁচজন সাধারণ মানুষের জবানবন্দি নিয়ে মোখলেছুরকে পুলিশ আটক করেনি বা তাঁকে কেউ থানার মধ্যে দেখেননি  এই মর্মে high court প্রতিবেদন দাখিল করেন।

পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই সাতক্ষীরার senior judicial masigstret হাবিবুল্লাহ মাহমুদ হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে থানা হেফাজত থেকে মোখলেছুর রহমানের নিখোঁজ হওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়।

 পরে হাইকোর্ট ওই বছরের 3 October এর মধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনকে(PBI) নির্দেশ দেয়। পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে মোখলেছুর রহমানকে থানায় এনে আটক রাখার সত্যতা মেলেনি বলে উল্লেখ করা হয়। 

হাইকোর্টের নির্দেশনার পরও কেটে যায় সাড়ে ৩ বছর 

২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে হাইকোর্ট মোখলেছুর রহমানের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় থানায় GD নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য ওই থানার তৎকালীন ওসি এমদাদুল হক শেখ, তাঁর পরের ওসি ফিরোজ হোসেন ও এসআই হিমেল হোসেনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করেন।  

 সে অনুযায়ী আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সহযোগিতায় মোখলেছুরের সাবেক স্ত্রী জেসমিন নাহার আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু ওই সময় জেলার আইনজীবীরা অপারগতা প্রকাশ করায় আর মামলা হয়নি। 

 আইনজীবী না পাওয়ায় তিনি মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আইনজীবী সুলতানা কামালের কাছে যান। তাঁরই সহায়তায় সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেমউদ্দিন ও আইনজীবী ফরহাদ হোসেনের  মাধ্যমে গতকাল আদালতে এ মামলা করা হয়।


মামলা করতে এত দেরি হলো কেন জানতে চাইলে নিখোঁজ মোখলেছুরের বাবা শেখ আব্দুর রাশেদ বলেন, তাঁর ছেলের সাবেক স্ত্রী জেসমিন নাহার বাদী হয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিলেনপরে জেসমিন অন্যত্র বিয়ে করেন।  

 ফলে তিনি (আব্দুর রাশেদ) আদালতে আবেদন করে মামলাটির বাদী হতে সময় লেগে যায়। তারপর সাতক্ষীরা আদালতে মামলা করার জন্য কোনো আইনজীবী রাজি হননি। এমনকি তিনি আইনজীবী সমিতিতে আবেদন করেও কোনো আইনজীবী পাননি। এসব কারণ ছাড়াও গত দুই বছর করোনার জন্য মামলা করতে দেরি হয় যায় তাঁছাড়া 

 mobile phone এ চাইলে সাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালীন ওসি ও বর্তমান রাঙামাটি জেলা ডিবির পরিদর্শক এমদাদ শেখ গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, মোখলেছুর রহমান সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। এর আগে তদন্তে প্রমাণও হয়েছে। তাঁর ধারণা, সাতক্ষীরায় জঙ্গি দমনে তাঁরা অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। এ কারণে জঙ্গিরা কোনো ঘটনা ঘটিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে পারে। 

Post a Comment

Previous Post Next Post